আদিবাসী কোরা উপজাতি পশ্চিমবঙ্গে কোরা (Kora) নামে স্বীকৃত। বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন নামে ডাকা হয়, যেমন - কডা, কড়া, কোড়া, কোডা, মুদিকড়া ইত্যাদি। কোরা উপজাতিদের ভারত সরকার তফসিলি উপজাতি (ST) হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছে। কোরা জনজাতি পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিম-মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগণা, বর্ধমান, বীরভূম, মালদা, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর, বাঁকুড়া, হাওড়া ও হুগলি জেলায় বসবাস করেন। এছাড়া ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড় ও বিহার, আসাম রাজ্যে কোরা উপজাতির লোক আছে। আর বাংলাদেশেও আছে প্রায় বিলুপ্তির পথে। বাংলাদেশের বেশিরভাগ কোরাদের মুসলিম ধর্মে ধর্মান্তরিত করা হয়েছে ও কিছু ভারতে পালিয়ে এসেছেন। বাংলাদেশে এখন আনুমানিক ১০ থেকে ১৫ টি পরিবার টিকে আছেন। 
কোরা উপজাতির বেশিরভাগ মানুষ হিন্দু ধর্মে বিশ্বাসী। এছাড়া কিছু কোরা সারনা ধর্মে বিশ্বাসী ও কিছু খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, জৈন ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়েছে। খ্রিস্টান মিশনারিরা পশ্চিম মেদিনীপুর ও ওড়িশার কোরা উপজাতির গরিব মানুষদের আর্থিক সাহায্যের লোভ দেখিয়ে হিন্দু ধর্ম থেকে খ্রিস্টান ধর্মে ধর্মান্তরিত করে চলেছেন। 
কোরা জনজাতি অন্যান্য আদিবাসী উপজাতি থেকে কম শিক্ষিত। কোরা উপজাতির শিক্ষার হার ৪০% থেকে ৫০% পর্যন্ত।
কোরা উপজাতির প্রধান পেশা ছিল মাটি কাটা। বর্তমানে চাষাবাদ, শ্রমিক ও খুব সামান্য মানুষ সরকারি চাকরি (প্রায় ১%) করেন। কোরা উপজাতির মানুষ সরকারি কোটার লাভ নিতে পারেনি শিক্ষার হার কম থাকার জন্য। এছাড়া বিভিন্ন কারখানায় কাজ করেন।
কোরা উপজাতির নিজস্ব ভাষা আছে। কোরা ভাষা সাঁওতাল ও হো ভাষার সঙ্গে কিছু মিল আছে। কোরা উপজাতির অনেকাংশ নিজস্ব ভাষা ভুলে গেছে, যে অঞ্চলে বসবাস করে সেই অঞ্চলের ভাষায় কথা বলে। কোরা উপজাতির নিজস্ব ভাষা থাকলেও কোনো লিপি নাই। 
কোরা উপজাতির অনেকাংশ নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি ভুলে গেছে। কোরা উপজাতির অনেকে নিজেদের দেবদেবীর পুজো না করে হিন্দু দেবদেবীর পুজো করে। মনে করা হয় কোরাদের আদি বাসস্থান ছিল ছোটনাগপুর ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকায়। কোরা উপজাতির মানুষ শাল‌ই, করম, গোয়াল, মকর, গাজন(ভক্তা) ইত্যাদি পুজো করে। পুজোপার্বনে আগে পাঁঠা বলি দেওয়া হতো, আগে কোরা উপজাতির মানুষদের আর্থিক অবস্থা ভালো ছিল না, তাই পুজোয় পাঁঠার বদলে দেশি মুরগির বলি প্রচলন করা হয়। কোরা উপজাতির লোকজন আগে শিকার করার জন্য তীর ও ধনুক রাখত, কিন্তু এখন কেউ রাখে না। ধামসা, মাদল, বাজনা প্রায় বিলুপ্তির পথে। 
কোরা উপজাতির মানুষ বিয়ে, অন্নপ্রাশন ও শ্রাদ্ধ নিজেরাই করে। বর্তমানে কিছু এলাকায় ব্রাহ্মন দিয়ে করা হয়। কোরা উপজাতির মানুষ সম গোত্রে বিয়ে করে না। কোরাদের গোত্র - সামাৎ(রাজা), সাপু(মন্ত্রি), বুৎকুৎ(বামুন), নাগডু(নাগা), হুরেৎ, সুরেন, হেমব্রম, তীর্কি, কিশাড়, টুনডু, বালিশায়, তুমড়াং, লুদাম, হর(কাশ্যপ), গাডি(গাড্ডি), কাউরী, তাম, হাঁসদা, বারদা, শাল, ভুঁইয়ামাছ, কানা ইত্যাদি।
কোরা উপজাতির মানুষদের পদবী - মুদি, সিং, কোরা, কডা ইত্যাদি।
কোরা উপজাতিদের নিজস্ব সংস্কৃতি বিলুপ্তির পথে। যে অঞ্চলে বসবাস করেন সেই অঞ্চলের সংস্কৃতি গ্রহণ করে চলেছেন। কোরা উপজাতির মানুষ হাড়িয়া, দেশি মদ ইত্যাদি নেষা করেন। যারা শিক্ষার আলো পেয়েছেন তারা নেশা থেকে দূরে থাকেন। কোরা উপজাতির মানুষদের মধ্যে কুসংস্কার ও অন্ধবিশ্বাস এখনও আছে। কোরাদের মধ্যে শিক্ষার হার কম। 
বর্তমানে কোরাদের সংস্কৃতি রক্ষা ও সামাজিক কল্যাণের জন্য অনেক সংগঠন কাজ করে চলেছেন কিন্তু তার প্রভাব সমাজে পড়েনি।

Post a Comment

أحدث أقدم